ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করুন অনলাইনে
কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করবেন এবং কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করতে কত টাকা ফি প্রয়োজন? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
দৈনন্দিন জীবনে একজন নাগরিকের ভোটার আইডি কার্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ভোটার আইডি কার্ডের কোন তথ্য ভুল থাকলে জরুরী জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করা প্রয়োজন। অনলাইনে সংশোধনের নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত এই লেখাটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার ও জন্মতারিখ দিয়ে Log in করে Profile থেকে Edit অপশনে গিয়ে সংশোধনী তথ্য বসিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করুন।
Nidw ওয়েবসাইট থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত সকল সেবা পাবেন। বাংলাদেশ জাতীয় সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধিত সকল নাগরিকদের তথ্যগুলো nidw ওয়েবসাইটে সংরক্ষণ করা হয়।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ফি আলাদা হয়।
সংশোধনের ক্যাটাগরি | সংশোধন ফি |
---|---|
এন আই ডি তথ্য সংশোধন | ২৩০ টাকা |
অন্যান্য তথ্য সংশোধন | ১১৫ টাকা |
উভয় তথ্য সংশোধন | ৩৪৫ টাকা |
সাধারণ রি-ইস্যু | ৩৪৫ টাকা |
জরুরী রি-ইস্যু | ৫৭৫ টাকা |
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন করার পূর্বে জেনে নেওয়া প্রয়োজন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে?জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সংশোধন ক্যাটাগরির উপরে। সংশোধনের ক্যাটাগরি অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করা হয়।
সংশোধনের ক্যাটাগরি | দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা | সংশোধনের কার্যদিবস |
---|---|---|
ক | উপজেলা নির্বাচন অফিসার | ৭ দিন |
খ | জেলা নির্বাচন অফিসার | ১৫ দিন |
গ | আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার | ৩০ দিন |
ঘ | এনআইডি মহাপরিচালক | ৪৫ দিন |
সাধারণ সংশোধনের ক্ষেত্রে সাধারণত ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করা হয়।
জাতীয় পরিচয় পত্র কি কি তথ্য সংশোধন করা যাবে
জাতীয় পরিচয় পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ডের যে সকল তথ্যগুলো সংশোধন করা যাবে সেগুলো হলঃ
- জাতীয় পরিচয় পত্র জন্ম তারিখ।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম।
- জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতা ও মাতার নাম।
- জাতীয় পরিচয় পত্র ঠিকানা পরিবর্তন।
- অন্যান্য সকল তথ্য সংশোধন।
আর দেখুনঃ স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাব
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের পদ্ধতি
অনলাইন থেকে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য নিচে দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করুন।সংশোধনের পূর্বে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো স্ক্যান করে নিবেন।
ধাপ –১: Nidw ওয়েবসাইটে প্রবেশ এবং অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধনের জন্য https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই লিংকে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট লগইন করুন।
Nidw ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করা না থাকলে প্রথমে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন এর জন্য “রেজিস্টার করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপরে আপনাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার অথবা ফ্রম নাম্বার বসিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ সিলেক্ট করে, ছবিতে দেখানো Captcha Code বসিয়ে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপরে আপনাদের নতুন একটি পেজ এ নিয়ে আসবে এখান থেকে ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট করুন। বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার (বিভাগ, জেলা, উপজেলা) বাছাই করতে হবে।
- তারপরে অটোমেটিক ভাবে একটি মোবাইল নাম্বার বসানো থাকবে, যদি না থাকে সেক্ষেত্রে একটি সজল নাম্বার বসিয়ে “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করুন। প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে একটি ৬ ডিজিটের Verification OTP পাঠানো হবে। উক্ত OTP বসিয়ে “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপরে Face Verification করার জন্য একটি QR কোড দেখানো হবে। প্রথমে প্লে স্টোরে গিয়ে NID Wallet অ্যাপসটি ডাউনলোড করবেন এবং অন্য একটি মোবাইল ফোনে ইন্সটল করবেন।
- এরপরে অ্যাপটি ওপেন করে ভাষা সিলেক্ট করে Agree and Continue করে দিলে অটোমেটিক ভাবে ক্যামেরা চালু হয়ে যাবে। এরপরে Nidw ওয়েবসাইটে দেখানো QR কোডটি স্ক্যান করুন।
- এই ধাপে Face Verification করতে হবে। Face Verification করার জন্য প্রথমে সোজাসুজি এরপরে ডানে ও বামে ঘুরে Face Verification প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন।
- Face Verification সম্পূর্ণ হলে পুনরায় Nidw পেইজে প্রবেশ করুন। এবং Account Password সেট করুন।
পাসওয়ার্ড সেট না করলে পরবর্তীতে Nidw ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট লগ ইন করতে উপরের প্রক্রিয়া গুলো পুনরায় সম্পূর্ণ করতে হবে।
ধাপ –২: তথ্য সংশোধন
সফলভাবে Nidw একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হলে প্রোফাইলে প্রবেশ করুন। এখান থেকে সাধারণত তিন ধরনের তথ্য সংশোধন করতে পারবেন (ব্যক্তিগত তথ্য – অন্যান্য তথ্য – ঠিকানা) আপনি যে ধরনের তথ্য সিলেক্ট করতে চান সেই পেইজে প্রবেশ করে Edit অপশনে ক্লিক করুন।
- এরপরে আপনারা যে তথ্যগুলো সংশোধন করতে চান উক্ত তথ্যে টিক মার্ক দিয়ে ডকুমেন্টস অনুযায়ী সঠিক তথ্য বসিয়ে দিন। এরপরে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপরে উপরে সংশোধিত তথ্যের সংশোধিত রূপ দেখাবে, সবকিছু ঠিক থাকলে পুনরায় “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ –৩: আবেদন ফি প্রদান
এই ধাপ থেকে আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে। বিকাশ, রকেট, অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
যে সকল ব্যাংকের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন ফি পরিশোধ করতে পারবেনঃ
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড।
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
- ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড।
ধাপ –৪: প্রমাণপত্র আপলোড করুন
প্রথমে আলোচনা করেছিলাম জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র গুলো স্ক্যান করে রাখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী স্ক্যান করা প্রমাণপত্রগুলো এখানে আপলোড করুন। প্রমাণপত্র আপলোড সম্পন্ন হলে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন। যথাযথভাবে সকল তথ্য প্রদান করলে আপনার আবেদনটি সাবমিট হবে।
ধাপ –৫: আবেদনপত্র প্রিন্ট কপি ডাউনলোড
যথাযথভাবে আবেদনটি সাবমিট হলে আবেদনপত্র প্রিন্ট / Download একটা অপশন দেখতে পাবেন। এখানে ক্লিক করে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি ডাউনলোড করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ যুক্ত করে সংযুক্ত উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা করুন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি লাগে
জাতীয় পরিচয় পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ডের কোন তথ্য সংশোধন করতে অনলাইনে আবেদন সম্পূর্ণ করে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি সাথে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংযুক্ত করতে হবে। ডকুমেন্টসগুলো হলঃ
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- এডুকেশনাল সার্টিফিকেট।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স/ নিকাহনামা/ পাসপোর্ট/ সার্ভিস বই/ এমপিওসিট ইত্যাদি।
- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক এফিডেফিট।
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে অফিস প্রদানের কর্তৃক প্রাপ্ত প্রত্যয়ন।
- সংশোধনের কারণ সম্পর্কিত লিখিত তথ্য।
- আবেদনকারীর নাগরিক সনদপত্র।
- বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য নিকাহনামা/ তালাকনামা/ মৃত্যু সনদ।
- প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট/চিকিৎসকের সনদপত্র।
- ওয়ারিশ সার্টিফিকেট এবং জমির দলিল (বিশেষ প্রয়োজন ক্ষেত্রে)
- উপজেলা নির্বাচন অফিসার কর্তৃক চাহিত অন্যান্য সকল দলিলপত্র।
সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ডকুমেন্ট আলাদা আলাদা হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন(ভিডিও)
উপরে আলোচনাকৃত তথ্য বুঝতে কোন সমস্যা হলে নিচের ভিডিও দেখে সম্পূর্ণ ধারণা নিন।