নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ড প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। আপনার বয়স যদি ১৮ বছর হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড করে নিতে হবে। এই লেখাটিতে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং আবেদন পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
একজন নাগরিক প্রাপ্তবয়স্ক হলে তথা ১৮ বছর হলে তার বিভিন্ন কর্ম ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন হয়। ১৬ বছর বয়স হওয়ার পরে আপনারা ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন কিন্তু ১৮ বছর বয়স হওয়ার পরে ভোটার আইডি কার্ড হাতে পাবেন এবং আপনি ভোট দিতে পারবেন।
পূর্বে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই লেখাটিতে অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে আবেদনপত্র প্রিন্টের সাথে নিচে উল্লেখিত ডকুমেন্টসগুলো সংযুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
- আবেদন পত্রের প্রিন্ট কপি।
- বয়স প্রমানের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / টিন সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
- আবেদনকারীর এডুকেশনাল সার্টিফিকেট (SSC অথবা সমমানের যদি থাকে)
- নাগরিকত্ব সনদপত্র।
- পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- বিবাহিত হলে স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- ঠিকানা প্রমাণের জন্য ইউটিলিটি বিলের কপি। যেমন – বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, টেলিফোন বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ ইত্যাদি।
এছাড়াও বাড়তি কোনো ডকুমেন্টস প্রয়োজন হলে জমা দেওয়ার সময় উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সাধারণত নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টসগুলো প্রয়োজন হয়।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য প্রথমে https://services.nidw.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে “নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন” মেনু থেকে আপনার সম্পূর্ণ নাম এবং ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্যাদি প্রদান করে আবেদন সাবমিট করুন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে সকল তথ্যগুলো আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত সার্টিফিকেট অনুযায়ী দিবেন। অন্যথায় আপনার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্যগুলো ভুল হতে পারে। পরবর্তীতে তথ্য সংশোধনে ভোগান্তি পোহাতে হবে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াঃ
- অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ।
- আবেদনের পরে অনলাইন থেকে আবেদন কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ উপজেলা নির্বাচন অফিসের জমা দিন।
- আবেদনপত্রের সাথে সকল তথ্যপ্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
- পরবর্তীতে প্রদত্ত নাম্বারে এসএমএস এর মাধ্যমে বায়োমেট্রিক প্রদানের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। উক্ত তারিখে উপস্থিত হয়ে বায়োমেট্রিক ও ছবি প্রদান করুন।
- কিছুদিন পরে এসএমএস এর মাধ্যমে আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার জানিয়ে দেওয়া হবে। এবং আবেদনকারী চাইলে অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবে।
- স্মার্ট কার্ড তৈরি হলে এসএমএস এর মাধ্যমে অথবা কল করে আবেদনকারীকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি নিচে ধাপ অনুসারে দেখানো হলো। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি নিজের মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
একাউন্ট রেজিস্টার | নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করার পূর্বে nidw.gov.bd ওয়েব সাইটে একাউন্টের রেজিস্টার করতে হবে।
একাউন্ট রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথমে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এরপরে “আবেদন করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
প্রথমে আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ/ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র অনুযায়ী সম্পূর্ণ নাম ইংরেজিতে বসিয়ে দিন। এরপরে জন্ম তারিখ dd-mm-yyyy ফরম্যাটে বসিয়ে যথাযথ ভাবে নিচে থাকা ক্যাপচারটি পূরণ করে Continue বাটনের ক্লিক করুন।
এরপরে উপরের ছবির মত একটি পেইজে নিয়ে আসা হবে এখান থেকে প্রথমে আপনার একটি সচল মোবাইল নাম্বার প্রদান করে Send SMS বাটনে ক্লিক করুন। কিছু সময়ের মধ্যে আপনার মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে একটি OTP কোট পাঠানো হবে যথাক্রমে কোডটি বসিয়ে Continue বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তীতে আপনাকে একটি ইউজারনেইম এবং পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। এই ইউজারনেইম এবং পাসওয়ার্ডটি সংরক্ষণ করে রাখবেন। পরবর্তীতে অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার জন্য এগুলো প্রয়োজন হবে।
যথাক্রমে Username, Password, Retype password (পুনরায় পাসওয়ার্ড প্রদান করুন) বসিয়ে Continue বাটনে ক্লিক করুন।
ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান ও ফরম সাবমিট
এখান থেকে প্রথমে প্রোফাইলের তথ্যগুলো এডিট করতে হবে। প্রোফাইলে তথ্যগুলো এডিট করার জন্য profile details বাটনে ক্লিক করুন।
প্রোফাইলের যাবতীয় তথ্য গুলো এডিট করার জন্য উপরের ডান কর্নারে থাকা Edit বাটনে ক্লিক করুন।
- এখান থেকে তিন ধাপে আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো প্রদান করতে হবে। প্রথমে Personal information থেকে –
- আপনার নাম, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, জন্মস্থান, জাতীয়তা, জন্মতারিখ রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্রদান করতে হবে।
- এরপরে আপনার পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী পিতার সকল তথ্য প্রদান করুন।
- একইভাবে আপনার মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী মাতার সকল তথ্য প্রদান করুন।
- বড় ভাই – বোনের নাম এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার প্রদান (বাধ্যতামূলক নয়)
- বৈবাহিক অবস্থা সিলেক্ট করুন।
বিঃদ্রঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন ফরম পূরণের ক্ষেত্রে লাল কালারের (*) স্টার চিহ্নিত অপশন গুলো পূরণ করা বাধ্যতামূলক।
পুনরায় তথ্যগুলো যাচাই করে Next বাটনে ক্লিক করুন।
এরপরে identification information অপশনে চলে আসবেন। এখান থেকে যথাক্রমেঃ
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পেশা সিলেক্ট করবেন
- প্রতিবন্ধকতা থাকলে উল্লেখ করবেন
- টিন নাম্বার/ ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার/ পাসপোর্ট নাম্বার বসিয়ে দিবেন (বাধ্যতামূলক নয়)
- ধর্ম সিলেক্ট করবেন
- টেলিফোন নাম্বার (যদি থাকে)।এরপরে Next বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তীতে address অপশন থেকে আপনার প্রেজেন্ট ও পার্মানেন্ট এড্রেস সিলেক্ট করবেন।
- Country of Residence থেকে প্রথমে দেশ সিলেক্ট করুন।
- voter address থেকে যদি আপনার পার্মানেন্ট ও প্রেজেন্ট এড্রেস এক হয় তাহলে যেকোনো একটি সিলেক্ট করতে পারেন। এবং যদি আলাদা হয় সেক্ষেত্রে সঠিক এড্রেস সিলেক্ট করুন।
- প্রথমে প্রেজেন্ট এড্রেস সিলেক্ট করুন।
- এরপরে পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস সিলেক্ট করুন।
এর পরে একটু নিচে গিয়ে voter area নির্বাচন করে দিয়ে পুনরায় উপরে এসে Next বাটনে ক্লিক করুন।
এরপরে আপনাকে ডকুমেন্টস আপলোড স্টেপে নিয়ে আসবে। নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে অনলাইনে কোন ডকুমেন্টস প্রদানের প্রয়োজন নেই তাই এখান থেকে Next বাটনে ক্লিক করে দিন। পরবর্তীতে আপনাদের কনফার্ম অপশনে নিয়ে আসা হবে। এখান থেকে Submit বাটনে ক্লিক করে আপনার আবেদন ফরমটি জমা করুন।
এরপরে আবেদন ফরমটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করতে হবে। উপরের কর্নারে থাকা Download বাটনে ক্লিক করে ফর্মটি ডাউনলোড করে নিন। এবং পরবর্তীতে এই ২ পাতার ফর্মটি প্রিন্ট করে নিবেন। প্রিন্টের পরে উক্ত ফর্মটি ভালোভাবে চেক করে নিবেন।
- আপনার নিজের স্বাক্ষর দিবেন।
- শনাক্তকারীর তথ্য তথা আপনার এলাকার মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যানের জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং তার স্বাক্ষর নিয়ে নিবেন।
- পরবর্তীতে আপনার পরিবারের অন্য কোন সদস্যের জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার এবং স্বাক্ষর বসিয়ে দিবেন।
এ সকল বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হলে উক্ত ফর্মটি নিয়ে নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন। নির্বাচন অফিসে Help Desk দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই বিষয়ে সম্পর্কে আপনাকে অনুগত করবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা |নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
আবেদন পত্রের অনলাইন কপি ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর ও তথ্যগুলো প্রদান করে উক্ত আবেদন পত্রের সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে ভেরিফিকেশনের জন্য আপনাকে কল করতে পারে।
বায়োমেট্রিক ও ছবি প্রদান
ডকুমেন্টস এর জমা দেওয়ার কিছুদিন পরে আপনার প্রদত্ত নাম্বারে এসএমএস এর মাধ্যমে অথবা কল করে ছবি তোলার ও বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদানের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। উক্ত তারিখে উপজেলা নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করবেন এবং ছবি তুলে আসবেন।
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড ও স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ
বায়োমেট্রিক প্রদানের আনুমান ২০ থেকে ৩০ দিন পরে আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে এসএমএস এর মাধ্যমে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার জানিয়ে দেওয়া হবে। উক্ত নাম্বার দিয়ে পরবর্তীতে অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন। এবং পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ড তৈরি হলে আপনাকে এসএমএস অথবা কল করে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহের ঠিকানা জানিয়ে দেওয়া হবে। উক্ত ঠিকানা থেকে আপনার ভোটার আইডি কার্ড/ স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
One Comment